বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং আদর্শ হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক নানু মিয়া ও প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারকে স্বৈরাচারের দোসর ও ১৫ বছরে শিক্ষার্থীদের ৮ কোটি টাকা লুপাটকারী আখ্যা দিয়ে তাদের আপসারণের দাবীতে শিক্ষার্থীরা ৩ মাস যাবৎ আন্দোলন করছেন। কিন্তু তাদেরকে বাঁচাতে মিরয়া ইউএনও মাহবুবুর রহমান, ২ শিক্ষককে বাধ্যতামুলক ছুটিতে পাঠিয়ে তদন্তের নামে রীতিমত নাটক মঞ্চস্থ করছেন তিনি (ইউএনও)। ইউএনও মাহবুবুর রহমান মৌলভী বাজার জেলার কুলাউড়ার আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং তিনি নিজেই ছিলেন ছাত্রলীগে নেতা, সেজন্যই ৯ ছাত্র-জনতা হত্যাকারী পলাতক ইউপি চেয়ারম্যান ধন মিয়ার নিজস্ব লোক হিসেবে পরিচিত ওই্ ২ শিক্ষককে ইউএনও সুকৌশলে চাকুরীতে বহাল রাখতে চান বলে দাবী করেছেন আন্দোলনকারীরা।
জানা যায়, ১৫ বছরের স্বৈরশাসক আমলে ক্ষমতার দাপটে বেআইনিভাবে বিরতিহীনভাবে আদর্শ হাইস্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন ৫ আগস্ট বানিয়াচংয়ে ৯ ছাত্রজনতা হত্যা মামালার মুল আসামী ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া। তার দুর্নীতির মুল সহচর ছিলেন শিক্ষক নানু ও পারভীন। ওই ২ শিক্ষক মিলে বিভিন্ন খাত থেকে স্কুলের প্রায় ৮ কোটি টাকা লুপাট করেন। পট পরিবর্তনের পর গত ৩ সেপ্টেম্বর স্কুলের সাবেক ও বর্তমান শত শত শিক্ষার্থীরা মিলে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক নানু ও পারভীনের অপসারণ চেয়ে স্কুলে তুমুল আন্দোলন করেন, এসময় শিক্ষকদ্বয়ের বাধ্যতামুলক পদত্যাগের দাবীতে স্কুলে অবস্থান নেন তারা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে স্কুলে পৌঁছে ইউএনও মাহবুবুর রহমান ওই ২ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিনস্থিতি শান্ত হয়।
কিন্ত ঘটনার ১ সপ্তাহ পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফের ৯ সেপ্টেম্বর ৫ থেকে ৬ শত ছাত্র-ছাত্রী উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেন। স্কুলের সভাপতি ইউএনও মাহবুবুর রহমান কৌশলে অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়কে বাধ্যতামুল ছুটিতে পাঠান এবং আন্দোলনকারীদের থেকে লিখিত অভিযোগ নেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত অভিযোগকারীরা হলেন নবম শ্রেণীর ছাত্র তানজিল, দশম শ্রেণীর ইমদাদ, শাকিব ও সাবেক শিক্ষার্থী আতাউর রহমান বিপ্লব। অভিযোগে বলা হয় সাবেক সবাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আ”লীগের উপদেষ্টা (বর্তমানে পলাতক) ধন মিয়ার নির্দেশে শিক্ষক নানু ও পারভীন মিলে ফরম পুরণ, ভর্তি ফি, বেতনসহ বিভিন্ন খাত থেকে ৮ কোটি টাকা লুপাট করেন তাই তাদেরকে অপসারণ করা হোক। আবেদনের সাথে টাকা আত্মসাতে প্রমানাধি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
অভিযোগকারীর একজন তানজিল জানান, ইউএনও মাহবুবুর রহমান কুলউড়া উপজেলার আওয়ামীলীগ পরিবারের এবং তিনি নিজেও ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন, ফলে সারাদেশে দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা অপসারিত হলেও বানিয়াচংয়ে ঘটে এর ব্যতিক্রম। তার দাবী আড়াই মাস ধরে তদন্তের নামে চলছে প্রহসন, দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বাঁচাতে কৌশলে কাল ক্ষেপণ করছেন ইউএনও। তিনি বলেন অবিলম্বে শিক্ষক নানু ও পারভীনকে অপসারণ না করলে আবারও তারা রাজপথে বিরামহীন আন্দোলন করবেন। শিক্ষার্থী আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন ৩ সেপ্টেম্বই আমরা সফল হতাম, কিন্ত ইউএনও সেটা করতে দেননি। অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের পাশাপাশি ইউএনও মাহবুবুরেরও অপসারণ দাবী করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইউএনও মাহবুবুর রহমান বলেন এটা স্কুলের ইন্টারনাল বিষয়, তাই সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না আর প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারের মুঠোফোনে ফোন করলে তার স্বামী রিসিভ করে বলেন তিনি রেষ্টে আছেন এখন কথা বলতে পারবেন না।