মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস আজ,শতাধিক পুজারীকে ব্রাশফায়ারে হত্যা

জীবন আহমেদ লিটন :আজ ১৮ আগষ্ট মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দুর্গম হাওড় পাড়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম মাকালকান্দিতে পাক হানাদাররা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় নারী শিশু ও পুরুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্ত স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শহীদদের দেওয়া হয়নি মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ও তাদের পরিবারকে দেওয়া হয়নি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বীকৃতি।

ইতহাস ঘেটে জানা যায়, সৈয়দ ফজলুল হক মোতাওয়াল্লীর নেতৃত্বে বানিয়াচংয়ে রাজাকার বাহিনী গড়ে উঠে ১৯৭১ সালে। গৃণ্য ও জঘন্যতম দেশদ্রোহী স্থানীয় রাজাকারদের সাথে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজে ১৫ আগষ্ট পাকহানাদার সেনা কর্মকর্তারা বৈঠক করে বানিয়াচং মাকালকান্দি গ্রামে আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮ আগষ্ট বুধবার ভোরে অর্ধশতাধিক নৌকা নিয়ে রওয়ানা দেয় হানাদার বাহিনী। বানিয়াচং থেকে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের সাথে যোগ দেয়।

আনুমানিক সকাল ৮ ঘটিকায় ঘাতকরা পৌছায় দূর্গম ও তৎকালীন ধনসম্পদ ভরপুর মাকাল কান্দি গ্রামে। তখন গ্রামবাসী চন্ডি মন্দিরে মনষা পুজা করছিলেন। কোন কিছু বুঝার আগেই পূজায় মগ্ন নিরীহ নরনারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে নরপশুর দল। চালানো হয় মুহুর্মুহু গুলি। হানাদারদের আক্রমনে কেঁদে উঠে আকাশ-বাতাস। কাতারে কাতারে দাঁড় করিয়ে শতাধিক নারী পুরুষকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

তবে ৭৮ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। নরপশুরা মিনতী রানী পাল নামের এক পূজারীর কোল থেকে তার ৩ বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। রাজাকারদের সহযোগীতায় হানাদাররা সেদিন চালায় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। যারা নৌকা দিয়ে পালাতে পেরেছিলেন তারা প্রাণে বেঁচে যান। কেউ কেউ ঝুপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থেকে প্রাণ রক্ষা করেন। হানাদাররা গণহত্যা করেই কান্ত হয়নি, বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ সুযোগে স্থানীয় রাজাকাররা চালায় ব্যাপক লুটপাট।

কথা হয় এ গ্রামের হরিপদ চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, ঐ দিন তার মা, বাবা, ভাই বোনসহ ৭ জনকে পৈশাচিকভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। কৃপেশ চৌধুরী গোপালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সেদিন আমার বয়স ছিল ৫ বছর।নরপিচাশরা আমার মা, বাবা, ভাই-বোনসহ আমার পরিবারের ৯ সদস্যকে হত্যা করে। তাদের দাবী শীহদদের মরনোত্তর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও তাদের পরিবারকে দেওয়া হোক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সকল সুযোগ সুবিধা।

হানাদার বাহিনীর নির্মমতায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, ক্ষীরেন্দ্র চৌধুরী, কর্ণমোহন চৌধুরী, কুপেন্দ্র চৌধুরী, কানু চৌধুরী, গীরেন্দ্র চৌধুরী, ধীরেন্দ্র চৌধুরী, নকুল দাশ, প্রমোদ চৌধুরী, অন্নদা চৌধুরী, মিরালাল চৌধুরী, জহর লাল দাশ, গুনেন্দ্র দাশ, হরেন্দ্র চৌধুরী, গুরুচরন চৌধুরী, রবীন্দ্র চৌধুরী, ফনিলাল দাশ, ইন্দ্রলাল দাশ, সরিন্দ্র দাশ, সুর মণি দাশ, অভিনয় চৌধুরী, গিরিষ চৌধুরী, জ্যোতিষ চৌধুরী, খোকা চৌধুরী, কুমেদ চৌধুরী, নুপেন্দ্র দাশ,

লবুরাম দাশ, তরুণী দাশ, দীনেশ দাশ, ঠাকুর চান দাশ, মনোরঞ্জন দাশ, কতন দাশ, সদয় চান দাশ, কুমোদিনী চৌধুরী, সরলাবালা চৌধুরী, ছানুবালা চৌধুরী, মিনুবালা চৌধুরী, তমালরাণী চৌধুরী, সুশীলা সুন্দরী চৌধুরী, নিত্তময়ী চৌধুরী, মুক্তলতা চৌধুরী, স্বপ্নারাণী চৌধুরী, ললিতা রাণী চৌধুরী, মিলু রাণী চৌধুরী, পিলু রাণী চৌধুরী, উজ্জল রাণী দাশ, সত্যময়ী দাশ, উন্মাদিনী দাশ, হেমালতা দাশ, সুচিত্রা বালা দাশ, ব্রম্মময়ী দাশ, শুসীলা বালা দাশ, চিত্রাঙ্গ দাশ, পিবদনাসিনী চৌধুরী, সোহাগী বালা দাশ,

শৈলজবালা দাস, শোভা রাণী বালা দাশ, অঞ্জুরাণী দাশ, মরীরাণী দাশ, লক্ষীরাণী দাশ, সোমেশ্বরী দাশ, চিত্রময়ী চৌধুরী, শ্যামলা চৌধুরী, তরঙ্গময়ী চৌধুরী, সরুজনী চৌধুরী ও সরস্বতী চৌধুরী।

Print Friendly, PDF & Email

আরও পড়ুন...

নবীগঞ্জে ফুফুর সহযোগিতায় তরুণীকে ধর্ষণ করলেন ফুফা ! ফুফু-ফুফা আটক

করোনা এবং বন্যার কারনে বানিয়াচংয়ের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান

লক্ষীবাওরে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে বানিয়াচং উপজেলা প্রেসক্লাব