আদালতের রায় উপেক্ষা করে ৫ বছর যাবত বেতন দেয়া হচ্ছে না প্রধান শিক্ষককে

জীবন আহমেদ লিটন : বানিয়াচং মুরাদপুর এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিন এক আওয়ামীলীগ নেতার রোষাণলে পড়ে ৫ বছর যাবত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাইকোর্ট ও সিলেট শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে প্রধান শিক্ষককে ৫ বছর যাবত বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ওই প্রভাবশালী চক্রটি। ফলে পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিন।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জাকির হোসেন মহসিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারী তজমুল হক চৌধুরী ফায়দা নিতে বিভিন্ন অনিয়মের প্রস্তাব করেন। এ অনৈতিক প্রস্তাবে সায় দেননি প্রধান শিক্ষক মহসিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল শিক্ষক মহসিনকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাময়িক বরখাস্ত করেন বিদ্যালয় তৎকালীন সভাপতি তজমুল চৌধুরী।

পরে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের আপিল আর্বিট্রেশন কমিটি তদন্ত করলে প্রধান শিক্ষক নির্দোষ প্রমাণিত হন। পরে বোর্ড ২০১৯ সালের ৬ মে তাকে স্বপদে পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতনসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয়ার লিখিত নির্দেশনা দেন তৎকালীন স্কুল কমিটির সভাপতি মোঃ তৈয়বুর রহমান চৌধুরীকে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে তদন্ত কমিটির নিকট বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন তৈয়বুর রহমান চৌধুরী। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৭ মার্চ ২০২১ পুনরায় উভয়পক্ষকে নিয়ে শুনানি করে তদন্ত কমিটি সভাপতির আবেদন নাকচ করে ২০২১ এর ৭ এপ্রিল প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে যোগদান করার আদেশ দেওয়া হয়।

এ সময় বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি সভাপতি ছিলেন তৎকালীন ইউএনও মাসুদ রানা। তিনি শিক্ষাবোর্ডের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন করে ২১ লক্ষ টাকা বকেয়া বেতনের মধ্যে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা শিক্ষক মহসিনকে প্রদান করেন। এসময় তৈয়বুর রহমান চৌধুরী বিদ্যালয়ের সভাপতি না হয়েও সভাপতির পরিচয়ে হাইকোর্টে শিক্ষাবোর্ডের আদেশ স্থগিতাদেশ চেয়ে রীটপিটিশন দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে ২০২১ এর ১লা নভেম্বর প্রধান বিচারপতির ফুল বেঞ্চ চুড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান শিক্ষক মহসিনকে নির্দোষ ঘোষণা করে তাকে চাকুরীতে পনুর্বহালের নির্দেশ দেন। কিন্তু দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিনকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ওই প্রভাবশালী চক্রটি।

রোষাণলের শিকার প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিন জানান, তজমুল হক চৌধুরীর আপন ভাতিজা মোঃ রুমেল মিয়া চৌধুরী বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি। আমার অবর্তমানে যাবতীয় আয় তার ভাতিজার মাধ্যমে ৫ বছরে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা তজমুল হক চৌধুরী ও তার সহযোগীরা। আমাকে বিদ্যালয়ের বাহিরে রেখে অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে ওই চক্রটি। এছাড়াও তিনি জানান, স্কুলটি এমপিওভ‚ক্ত হলেও অদৃশ্য কারণে তাকে এমপিওভূক্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়েও স্কুলের বেতন ভাতাসহ যাবতীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি দাবী করেন।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি তজমুল হক চৌধুরী জানান , শিক্ষক মহসিনের যন্ত্রণায় তিনিসহ গ্রামবাসী অতিষ্ট। আমরা চিন্তা করছি বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে চাবি কর্তৃপক্ষের নিকট সমজিয়ে দেবো। শিক্ষককে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, অভিভাবকরা তাকে যোগদান করতে দিচ্ছেন না। তার বক্তব্যের সত্যতা খুঁজতে কথা হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক শেখ মোঃ আলী নুরের সাথে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক মহসিনের বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই। বরং সে না থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে।

ইউএনও এবং স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি পদ্মাসন সিংহ জানান, জটিলতাটি আমি বানিয়াচংয়ে যোগদান করার পূর্বের। প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মহসিনকে নিয়ে এলাকাবাসীর অনাস্থা রয়েছে । তাই সবকিছু বিবেচনায় একটি সুষ্ঠু সমাধান বের করার চেষ্টা করছি।

Print Friendly, PDF & Email

আরও পড়ুন...

সমবায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে সততার সহিত দায়িত্ব পালন করতে হবে, এমপি আব্দুল মজিদ খান

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান

বানিয়াচংয়ের ১৫ ইউনিয়নে ৮০ টি কৃষাণ কৃষাণী গ্রুপকে কৃষিউপকরণ ও টিন প্রদান

বানিয়াচংবাসীর ভালোবাসায় আমি আপ্লুত,মডেল প্রেসক্লাব কর্তৃক বিদায় সংবর্ধনায় ওসি এমরান হোসেন

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান