কর্মকর্তাদের স্বজন ছাড়া ঈদ ও কিছু কথা-শিব্বির আহমদ আরজু

শিব্বির আহমদ আরজু : প্রায় ১ বছরের অধিক হতে চলেছে করোনা ভাইরাস। এতে ধুকছে সারা বিশ্ব। দূর্বল থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহও এর কাছে পরাস্ত। বাড়ছে লাশের সারি। আক্রান্তের সংখ্যা লাখ-লাখ। স্কুল-কলেজসহ জরুরী সেবা ছাড়া অনেক অফিসসমূহ বন্ধ। করোনা ভাইরাসের করালগ্রাসে অর্থনীতি ভঙ্গুর। এ কঠিন অবস্থা থেকে উত্তোলনের জন্য বিস্তর চলছে গবেষণা। এরই মধ্যে ১৮টি মাস যাবত এক দেশ থেকে অপর দেশে ছড়ি ঘুরাচ্ছে এ ঘাতক মহামারী।

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার চাচ্ছেন নাগরিক সুবিধা দিতে। মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে ধর্মীয় বড় উৎসব হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এ ২ ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি পেতেন সরকারি চাকুরীজীবীগণ। কিন্তু সঙ্গত কারণে জনগণের সেবাসমূহ নিশ্চিত করতে সরকারি নির্বাহী আদেশে যার যার কর্মস্থলেই ঈদ উযাপন করতে হচ্ছে তাদের। ফলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে প্রিয়জন/স্বজনদের সাথে প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ৩টি ঈদ তারা উদযাপন করতে পারছেন না। এতে আক্ষেপ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই শত কষ্ট তারা অম্লান বদনে মেনে নিয়েছেন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।

এর মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা কাজ করেন তাদের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করেন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তাদের বলা হয় রাষ্ট্রের অতন্ত্র প্রহরী। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মরত চিকিৎসক-নার্সরাও একইভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে করে ইতিমধ্যে অনেকেও মারা গেছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জড়িত সব ব্যক্তি বা চিকিৎসক-নার্সরা যে সৎ তা না। এর মধ্যে নৈতিক অধ:পতন ব্যক্তিরাও আছেন। কিন্তু কোন একটি ব্যতিক্রম ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা সাধারণত সংশ্লিষ্ট পেশাকে তুলোধুনা করে ফেলি। আদতে তা কি ঠিক ? ধরুন আপনি কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রান্ত, চুরি-ডাকাতি বা প্রতারণা ইত্যাদির শিকার হলেন, তখন প্রথমেই প্রতিকার পাওয়ার জন্য যাবেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে।

এর পর স্তরবেধে ক্রমাগত অন্যান্য জায়গায়। তাদের প্রতি আস্থা রাখতেই হবে। অন্যদিকে কোন দূর্ঘটনার শিকার বা অসুস্থ হলে চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হবেন। এ ছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর নেই। কিন্তু চুন থেকে পান খসলেই যেভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী/চিকিৎসাসেবীদের ঢালাওভাবে মন্তব্য করি তা কোন ক্ষেত্রেই উচিৎ নয়। তারা জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা রাখতেই হবে। অবশ্য তাদেরও উচিৎ জনগণের সে আস্থা বা সম্মান ধরে রাখা। সরকারি চাকুরীজীবীগণ যে যেখানে আছেন সেখানকার মানুষরাই তাদের আপনজন। তাদের উন্নত জীবনমান নিয়ে তারা চিন্তা ও কাজ করেন। তারাও মানুষের কল্যাণের জন্য অনেক ত্যাগ ও উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। সেটা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।

রাষ্ট্রীয় সেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকে পঙ্গু হন, আবার মারাও যান। সে নজির এ দেশে নেহায়েত কম নয়। অনেকে বলতে পারেন আমি হয়তো সরকারি চাকুরীগণের পক্ষে সাফাই গাইছি। আমি/আমরা যখন আজকের এই পবিত্র দিনে ( ঈদ) মাতা-পিতা,সন্তান-সন্ততিসহ স্বজনদের নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছি, তখন বানিয়াচং থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশদের নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন থানার সুযোগ্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন। এ ছাড়া বানিয়াচংয়ের সন্তান অন্যত্র কর্মরত আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে না পারায় আক্ষেপ করেছেন। ফলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আজকের এ লেখার অবতারণা। সর্বশেষে একটি কথাই বলব, আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে, ইতিবাচক চিন্তা করার পাশাপাশি বিবেক-বোধ জাগ্রত রেখে মানবিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সবাই একই রাষ্ট্রের নাগরিক। এ দেশের সম্মান এবং কল্যাণ আমাদেরকেই ভাবতে হবে।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক,

বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাব,

বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : তরঙ্গ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Print Friendly, PDF & Email

আরও পড়ুন...

করোনা ঝুকিতে হজ্ব এজেন্সি শত মানুষকে নিয়ে ইফতার করায় সর্বত্র তোলপাড়

অপরাধমুক্ত বানিয়াচং গড়তে কাউকে ছাড় নয়- এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি

নবীগঞ্জে যুবদের ২১ দিনের প্রশিক্ষণ সমাপনী ও সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠান