মোঃ জাফর ইকবাল, স্টাফ রিপোর্টার।। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি গ্রামে একটি পরিবারকে পাচেঁর বাদ (একঘর) করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ওই পরিবারের লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। ঘরে তোলতে পারছে না ফসলী জমির পাকা ধান। ছেলে মেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারছে না স্কুলে। এতে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবী মানবাধিকার কর্মীদের।
গত দু’দিন ধরে একঘর অবস্থায় আছেন লিটন মিয়া ও তার পরিবার। এ ব্যাপারে লিটন মিয়া জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা পাওনা আদায়ের মামলা করে চরম বিপাকে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বাদী লিটন মিয়া।
সুত্রে জানায়, প্রায় ৪/৫ বছর আগে কুর্শি গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে লিটন মিয়ার শাশুড়ী সাফারুন বিবির মালিকানাধিন দখলীয় প্রায় ৩২ শতক আমন রকম ভুমি একই গ্রামের মৃত মইনুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে সুচতুর ইকরামুল ইসলাম চৌধুরী ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় এর্নাজি কোম্পানী তৈরীর জন্য খরিদ করেন। বিনিময়ে ৯ লাখ টাকার চেক এবং ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বদলে স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গিকারনামা প্রদান করেন দাতার জামাতা লিটন মিয়ার নামে। ফলে বিশ্বাস করে ভুমি দাতা বাকীতে চেক ও স্ট্যাম্পের বিনিময়ে ৩২ শতক আমন রকম ভুমি রেজিষ্ট্রি করে দেন। ভুমি রেজিষ্ট্রারী ও দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমান বেলেন্স (টাকা) না থাকায় ৯ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার করেন। প্রতারনার শিকার লিটন মিয়া বাধ্য হয়ে হবিগঞ্জ আদালতে সিআর মামলা নং-২৪/২০১৮ইং দায়ের করেন। এক পর্যায়ে মামলাটি বিচারের জন্য বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ, ২য় আদালত, হবিগঞ্জ এ স্থানান্তর করা হয়। যা দায়রা মামলা নং ৬০৪/২০১৮ইং।
আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিগত ৫ই অক্টোবর উক্ত মামলায় বিচারকালীন সময়ে আচরন ও চেকে বর্নিত টাকার পরিমান ও সার্বিক বিবেচনায় চেক ডিজনার এ্যাক্ট ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় দোষী সাব্যস্থক্রমে ১ (এক) বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং চেকে উল্লেখিত টাকার সমপরিমান অর্থাৎ ৯ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত রায় প্রদান করেন।
উক্ত রায়ের পর থেকেই সাজাপ্রাপ্ত আসামী ইকরামুল ইসলাম চৌধুরী পলাতক থেকে তার লোকজন দিয়ে এবং একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় মামলা তোলে নেয়ার জন্য বাদী লিটন মিয়াকে প্রাণনাশের হুমকীসহ তার জানমালের ক্ষতি সাধনের হুমকী দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অসহায় লিটন মিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও তার পরিবারের লোকজনের অগণিত হুমকীতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। আতংকে সময় অতিবাহিত করছেন তার পরিবার।
এ ব্যাপারে গত সোমবার বিকালে নবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন লিটন। ওই দিন রাত্ইে গ্রামের প্রভাবশালীরা পঞ্চাতে বসে লিটন মিয়াকে পাচেঁর বাদ (একঘর) করে রাখার ঘোষণা দেন। ফলে গত দু’দিন ধরে লিটন মিয়া ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
তার জমিতে পাকা ধান বিনষ্ট হচ্ছে। কাটতে দেয়া হচ্ছেনা। ছেলে মেয়ে স্কুলে যেতে পারছেনা।
এ ব্যাপারে লিটন মিয়া বলেন, বিশ্বাস করে নগদ টাকার বদলে চেক ও স্ট্যাম্পে লিখিতের বিনিময়ে ভুমি রেজিষ্ট্রারী করে দিলাম। অথচ ইকরামুল ইসলাম চৌধুরী তার সাথে প্রতারনা করেছেন। ফলে টাকা উদ্ধার করতে না পেরে আইনের আশ্রয় নিয়েও জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। যে কোন মুহুর্তে ইকরামুল ইসলাম ও তার লোকজন তার বা তার পরিবারের লোকজনের উপর হামলাসহ জানমালের ক্ষতি করতে পারে। তারা মামলা তোলে নিতে এসব হুমকী দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
প্রতিপক্ষের দাবী লিটন মিয়া আপোষে ১ লাখ টাকা নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করেননি। কুর্শি গ্রামের ইলিয়াছ মিয়া লিটন মিয়াকে গ্রাম্যপঞ্চাত একঘরে করে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে ওই সিদ্ধান্তের সাথে তিনি দ্বিমত। বর্তমানে একঘরে থাকা লিটন মিয়া ও তার পরিবার জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন।