বানিয়াচংয়ে নারী দিয়ে যুবককে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়কারী ৪ জন আটক ॥ যুবক উদ্ধার

জীবন আহমেদ লিটন ॥ হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার পুত্রসহ ৬ যুবক ঘটিয়েছে লঙ্কাকান্ড। সাথী নামের এক যুবতীর মাধ্যমে আজমিরীগঞ্জের এক যুবককে এনে জিম্মি করে তার পিতার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে। মুক্তিপণ আদায় করেও ওই যুবককে মুক্তি দেয়নি দুধর্ষ চক্রটি।

অবশেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বানিয়াচং সার্কেল শেখ মোঃ সেলিম ও বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এমরান হোসেনের সাহসী পদক্ষেপে অপহরণকৃত যুবককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় অপহরণকারী ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। ১১ জুন দিবাগত রাত ২ টায় স্থানীয় সাগর দিঘীর দক্ষিণ পাড়ের মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জিল মিয়ার পুত্র মশিউর রহমানের ঘর থেকে জিম্মি হওয়া যুবককে উদ্ধার ও দস্যুদের আটক করা হয়েছে।

আটকৃতরা হলো বানিয়াচং উপজেলা সদর জাতুকর্ণপাড়ার (মাইজের মহল্লা) মোক্তাদির হোসেনের পুত্র মনির হোসেন (২৪) একই এলাকার ধনু মিয়ার পুত্র আলমগীর মিয়া (১৯), যাত্রাপাশা মহল্লার (কান্দিপাড়া) আসাদুল মিয়ার পুত্র হেলাল মিয়া (২০) একই এলাকার সালা উদ্দিন মিয়ার পুত্র জাহেদ মিয়া (২০)।

এসময় ঘটনার মুল হোতা মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জিল মিয়ার পুত্র বহু অপকর্মের হোতা মশিউর রহমান (৩৫) ও যাত্রাপাশা মহল্লার (দিঘীর পাড়) সামছুদ্দিন মিয়ার পুত্র হিবজুর (২৩) পুলিশের উপস্থিতি টেরে পালিয়ে যায়।

৩ ঘন্টার রুদ্ধশা¦স অভিযানে আরও অংশ গ্রহন করেন বানিয়াচং থানার এস আই গৌতম সরকার, এস আই শিমুল রায় এবং সঙ্গীয় ফোর্সগণ।

সূত্র জানায় গত ১১ জুন ২০২০ রাত ৮ টায় হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ থানার শরীফনগর গ্রামের মোঃ শফিক মিয়ার ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে রাম্মি (২৪) কে সাথী নামক একটি মেয়ের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রলুদ্ধ করে বানিয়াচং থানাধীন ৪ নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নিয়ে আসে দুধর্ষ অপহরণকারীরা।
সেখান থেকে তাকে অজ্ঞাত স্থানে জিম্মি রেখে রাম্মির মুঠোফোন থেকে তার পিতাকে ফোন করে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ দাবী করে চক্রটি। অন্যথায় রাম্মিকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় অহরণকারীরা।

ফোন পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে দুইবারে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করেন পিতা মোঃ শফিক মিয়া। পরে পুত্রকে ফেরত না দেয়ায় তিনি বিষয়টি আজমিরিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে জানান। আজমিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বিষয়টি বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করেন এবং বাদীকে বানিয়াচং থানায় প্রেরণ করেন।

বানিয়াচং থানার পুলিশ মুক্তিপণ দাবী করা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের দেওয়া বিকাশের নম্বর গুলোর একটি নম্বরের ব্যবহারকারীর নাম শনাক্ত করতে সক্ষম হন। ওই বিকাশ এর সত্তাধিকারীর দেওয়া তথ্যমতে ১১ জুন দিবাগত রাত ২ টার সময় বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম ও অফিসার ইনচার্জ এমরান হোসেনের নেতেৃত্বে মঞ্জিল মিয়ার পুত্র মশিউর রহমানের বাডিতে অভিযান চালায় পুলিশ।

এসময় আনিসুর রহমান ওরফে রাম্মিকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় এবং চার অপহরণকারীকে আটক করতে সক্ষম হন। তবে দুইজন পালিয়ে যায়।
আটকৃকত আসামীদের প্রত্যেকের নিকট হতে নগদ ১ হাজার টাকা করে মোট ৪ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

উক্ত ঘটনায় আনিসুর রহমান রাম্মির পিতা শফিক মিয়া বাদী হয়ে অপহরকারী ৬ যুবকসহ সাগর দিঘীর দক্ষিণ পাড়ের ছমেদ মিয়ার কন্যা মেঘনা আক্তার সুজনা ওরফে সাথী (২০) কে আসামী করে বানিয়াচং থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার ন্যন্ত হয় এস আই শিমুল রায়ের উপর। এস আই শিমুল রায় আটককৃত আসামীদের ১২ জুন বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ সেলিম জানান, পলাতক আসামী ঘটনার মুল হোতা মশিউর ও তার সহযোগী এবং প্রতারনাকারী যুবতী সাথীকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।

বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এমরান হোসেন জানান, খবর পাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সফল অভিযানে অপহরণকৃত যুবককে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের মধ্যে চার জনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

Print Friendly, PDF & Email

আরও পড়ুন...

একটি রাস্তার জন্য বানিয়াচংয়ে শতবর্ষী মহিলা মাদ্রাসার ৫শ শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ

হবিগঞ্জে নৌকায় ভোট চাইলেন অধ্যাপক অপু উকিল

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান

সিলেটে গণধর্ষণ: আজমিরীগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভে বিএনপি নেতা সামছু্লের বাধা

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান