ক‌রোনায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মাথায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ 

দি‌লোয়ার হোসাইন, বা‌নিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে : বিশ্বব্যাপী তান্ডব চা‌লি‌য়ে‌ছে ক‌রোনা ভাইরাস। স্ববনযাপনের রুটিনের পাশাপাশি করোনা এলোমেলো করে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তো বটেই এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলেছে সবচেয়ে বেশি। ক‌রোনা প‌রি‌স্থি‌তে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মাথায় যেন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এ অবস্থায় ঘরে বসে প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

অদৃশ্য এক শক্তির আতঙ্কে সবকিছুর সাথে থমকে আছে পড়ালেখাও। এরমধ্যে বেশি বিপাকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। যে গতি ছিল পরীক্ষার প্রস্তুতিতে তা এখন অনেকটাই মন্থর। বই নিয়ে পড়তে বসলেও আছে পরীক্ষা শুরুর অনিশ্চয়তা। সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে উদ্বেগে আছেন অভিভাবকরাও।

সারাদেশের ন্যায় বিপাকে পড়ছেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের। গত ১ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার তান্ডবে এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ। যদিও শিক্ষা সংস্লিষ্টরা বলছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথেই পরীক্ষা শুরু হবে। তবে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হতে পারে এই নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা।

জানা যায়, এবছর বানিয়াচং উপজেলার ৬ টি কলেজের মোট ২ হাজার ৯০ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। পরীক্ষার আগ মুহুর্তের প্রস্তুতির যে গতি তাদের ছিল তা অনেকটাই থমকে গেছে করোনা ভাইরাসের ছোবলে।

বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মাধবী আক্তার জোনাকি। তিনি জানান, পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছেই না। যে প্রস্তুতি ছিল তাও ধরে রাখতে পারছি না। জানিনা কবে পরীক্ষা হবে। বই নিয়ে বসলেও পড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছি না। খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি আমরা।

সুফিয়া-মতিন মহিলা কলেজের এইচএসএসি পরীক্ষার্থী সনি আক্তার। ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এ পরীক্ষার্থী বলেন, পড়ালেখা মোটেই হচ্ছে না। আগের গতি একবারেই এখন মন্থর হয়ে গেছে। আগের প্রস্তুতি ধরে রাখতে পারছি না। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটছে দিন। পরীক্ষা কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।

এদিকে করোনার এই যখন পরিস্থিতি তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার আহবান শিক্ষকদের। তাছাড়া মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে মিলবে যে কোন পরামর্শ, এমনটাই বলছেন তারা।

জনাব আলী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক রিতা রানী দেব বলেন, দুশ্চিন্তা না করে এই মুহুর্তে পরীক্ষার্থীদের উচিৎ বইয়ে ডুবে থাকা। পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলে করোনা আতংক থেকেও দূরে থাকতে পারে তারা। তাছাড়া পরীক্ষা শুরুর আগে অনেক শিক্ষার্থী ঠিকমত প্রস্তুতি নিতে পারে না। দুশ্চিন্তা না করে তারা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারে। তাছাড়া ভালো ফলাফলের জন্য এই সময়টাতে বার বার রিভিশন দিয়ে পড়াটাকে আরও সঠিকভাবে আয়ত্ব করে নিতে পারে তারা।

এদিকে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পরীক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই দুর্যোগের সময় তারা যাতে বই ছেড়ে না দেয় সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তারা।

সুফিয়া-মতিন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছালামত আলী খান বলেন, যেকোনো দূর্যোগের সময় ভেঙে পড়লে চলবে না। পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কিছুটা ছন্দপতন হলেও ভেঙে না পড়ে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। বইয়ের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে সারাক্ষণ।

বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দাশ বলেন, পৃথিবীতে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। করোনা ভাইরাসও স্থায়ী হবে না। একসময় করোনা ভাইরাস মুক্ত হবে পৃথিবী। আবারও সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই বই ফেলে না রাখে। দুশ্চিন্তা না করে ঘরবন্দীর এই সময়টা তারা পড়ালেখা করেই কাটিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া তাদেরকে পরীক্ষার পড়া বার বার রিভিশন দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

মানসিকভাবে যেন কেউ ভেঙে না পড়ে সেজন্য পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের সাথে সময় কাটানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মহামারী পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করতে পারছেন না কেউ। তাই ভয় নয়, মহামারী ঠেকাতে হতে হবে সচেতন-এমন মত সংশ্লিষ্টদের।

 

Print Friendly, PDF & Email

আরও পড়ুন...

বানিয়াচংয়ের বিদায়ী এসিল্যান্ড মতিউর খান ভুমি সেবাকে পৌঁছে দিয়েছেন  হাতের মুঠোয় : করেছেন আইনের শাসন

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান

৩ মাসেও নিখোঁজ নাজমার মেলেনি সন্ধান,অবুঝ শিশুরা প্রহর গুণছে কখন মা ফিরবে

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান

বানিয়াচংয়ে ইউএনও মাসুদ রানার সরকারী মুঠোফোন নাম্বার ক্লোন

অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক অনুসন্ধান